কর্মীদের অফিসেই তিনবেলা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছি
১৪ এপ্রিল ২০২১
২০০২ সাল থেকে আইটি ও আইটিএস খাতের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে কাজ করছে দেশের খুবই পরিচিত আন্তর্জাতিকমানের বিপিও প্রতিষ্ঠান ফিফোটেক। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এবারের ২০২১ সালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদ হোসেন।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দৈনিক ডিজিটাল সময়কে বলেন, আমরা সাধারণত প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল জাকজমকপূর্ণভাবে ফিফোটেকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে থাকি। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে গত বছর আর এবছর আর সেভাবে উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে না পারলেও আমাদের প্রতিষ্ঠানটিকে ধারাবাহিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সারাবিশ্বের আমাদের কাস্টমারদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি দেশের তরুণ সমাজকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
২০০২ সালে মাত্র পাঁচজন লোক নিয়ে যাত্রা শুরু হয় তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিপিও প্রতিষ্ঠান ফিফোটেকের। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশের ৭টার বেশি ভাষা নিয়ে চলছে এই প্রতিষ্ঠানটি কর্মযজ্ঞ। ভারত, দুবাই, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
পবিত্র মাহে রমজান মাস উপলক্ষে ফিফোটেকের কার্যক্রম নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বছর ঘুরে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে আবারও এলো পবিত্র মাহে রমজান। শুরু হলো সংযম ও সাধনার মাস। খোশ আমদেদ মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার মাসে মহামারি থেকে মুক্তি পেতে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেন মুসলমান ভাই-বোনেরা। আজ সেহরি খেয়ে প্রথম রোজা রেখেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এই মাসের প্রথম দিনে আমরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শ্রমজীবী ও সাধারণ ভাই-বোনদের ইফতারি দেওয়া শুরু করবো। প্রথম দেড় থেকে দুইশ মানুষকে ইফতারি দেবো। পরে অবস্থা বুঝে আস্তে আস্তে এই সংখ্যাটা বাড়াবো।
গত বছরে করোনাকালীন ফিফোটেকের উদ্যোগে বিভিন্ন শ্রমজীবী পরিবারের মধ্যে খাবার উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এবারের পরিকল্পনা কেমন? প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বলেন, ঈদ মানেই আনন্দ, ভ্রাতৃত্ব আর ভালোবাসায় একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ও খুশি ভাগাভাগি করে নেওয়া। তাই বৈরী আবহাওয়াতেও করোনা বিপর্যয়ে বিপন্নদের মধ্যে ফিফোটেকের উদ্যোগে গত বছরে বিভিন্ন শ্রমজীবী পরিবারের মধ্যে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এবারও করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করলে তো একটা বড় অংকের টাকা খরচ করতে হতো। আমরা সেই খরচের টাকাটা খেটে খাওয়া, গরিব মানুষকে দিতে চাই। অবশ্য সেই কার্যক্রমটা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে যেতো। আমার আব্বা-অম্মা করোনায় আক্রন্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার কারণে আর সেটা শুরু করা হয়ে উঠেনি। কেননা সব কিছু তো আমাকেই দেখাশোনা করতে হচ্ছে। উনারা আগামী সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলে আমরা করোনাকালীন বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষের খাবার উপহার দেওয়ার বিষয়টিতে ফোকাস করবো। সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। আর খাবার উপহারের মধ্যে থাকে চাল, ডাল, আলু, চিনি, লাচ্ছা, সেমাই, পোলাও চাল, দুধ ইত্যাদি। এবার ১০০০ মানুষের মধ্যে এই উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
৪০০ অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বর্তমানে কারওয়ান বাজারে অবস্থিত সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে সুবিশাল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ অফিস থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দেশি-বিদেশি প্রায় ৩০০র অধিক প্রতিষ্ঠানের। পাশাপাশি সম্প্রতি দুবাইতে প্রতিষ্ঠানটির অফিস থেকে কাস্টমারদের সেবা দেয়া হচ্ছে সুদক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নিয়ে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের পাশাপাশি ডাটা মাইনিং, ডাটা ম্যানেজমেন্ট, ডাটা এন্ট্রিসহ নানান ধরনের প্রযুক্তিগত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দেশের এই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ফিফোটেক।
মাহামারির এই সময়ে ফিফোটেকের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন? জবাবে ফিফোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ফিফোটেক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গত বছরে ৫০ জন কর্মী প্রতিষ্ঠানে রেখেছিলাম। এবার রাখছি ৪০ জন। তাদেরকে অফিসেই তিনবেলা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করছি। আজ ভোরে অফিসে সেহরি করেছেন ৩৯জন কর্মী।
তিনি আরো বলেন, করোনাকালীন এই মহা দুর্যোগের মধ্যেও আমরা কোন কর্মী ছাঁটাই করি নাই। এমনকি বেতন ও কমানো হয় নাই। বিপিও সেক্টরে গ্লোবাল মার্কেট সাইজ ৯২ বিলিয়ন ডলারেরও অধিক মার্কেট রয়েছে। ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশের বিপিও সেক্টরের মার্কেট সাইজও। আমরা বিপিও সেক্টরের এই বাজারে নিজেদের আরো শক্ত অবস্থান তৈরি করতে দক্ষ জনবল ও প্রতিষ্ঠানকে নতুন নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।
বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সেক্টরের বর্তমান সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) মহাসচিব বলেন, দেখুন বিপিও সেক্টরের বর্তমান সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে বলতে গেলে বলবো আমাদের খারাপ সময় যাচ্ছে। যেখানে আমাদের কাজ করে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়, সেখানে এখন আমাদের কাজ একেবারে কমে গেছে। গত জানুয়ারিতে যেমন বুঝতে ছিলাম আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা ঠিক হওয়ার পথে গিয়েও আবার খারাপ হয়ে গেল। করোনার কবলে পড়লাম। এখন আমরা একটা অনিশ্চিত পথে হাঁটছি। আগামীতে যে কি অবস্থা হবে আমরা কেউ বলতে পারছি না।
গত বছেরর ৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে গ্লোবাল বিপিও অ্যালায়েন্স (জিবিএ) সদস্য কোম্পানি হিসেবে কাজ শুরু করেছে ফিফোটেক। সদস্য কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম কেমন চলছে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কল সেন্টার ও বিপিও খাতের গ্রাহকদের কেন্দ্রীয়ভাবে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে গঠন করা হয়েছে জিবিএ জোট। বিশ্বের সবচেয়ে বড় কলসেন্টার জোট জিবিএ এশিয়া, ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার বিপিও খাতে কাজ করছে। জিবিএ জোটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ফিফোটেক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাংলা ভাষার গ্রাহকদের বাংলাদেশ থেকে ও হিন্দি ভাষার গ্রাহকদের ভারতের কলকাতা থেকে কলসেন্টার ও ব্যাক অফিস সেবা দিতে ইতোমধ্যেই বিশ্বের কয়েকটা ক্লায়েন্টের সাথে কাজ শুরু করেছি। আর কয়েকটা কাজের জন্য কমিউনিকেশন চলতেছে।